বিপ্লবী জীবন এবং ফিদেল কাস্ত্রো

বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্র পরিচালনা করা নেতাদের তালিকায় ফিদেল কাস্ত্রো তিন নম্বরে, তার আগে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং থাইল্যান্ডের প্রয়াত রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজ। ১৯৫৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কিউবার প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণ করেন কাস্ত্রো। ২০০৬ সালের ৩১ জুলাই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হলে ভাই রাউলের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ফিদেল। এরপর ২০০৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি রাষ্ট্রপ্রধানের পদে আর না ফেরার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

জীবনের শেষ বছরগুলোতে কাস্ত্রো জনসম্মুখে খুব একটা আসতেন না। হঠাৎ দুই-একটা অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যেত। ২০১২ সালে দুই বার ও ২০১৩ সালে দুইবার তাকে জনসম্মুখে দেখা যায়।

আর ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি একটি সাংস্কৃতিক সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সর্বশেষ তাকে জনসম্মুখে আসতে দেখা যায়।

এছাড়া মূলত অতিথিদের সঙ্গের সাক্ষাতের ভিডিও এবং ছবি দিয়েই জনগণের সঙ্গে এই নেতার যোগাযোগ রক্ষা হতো। এ সময় তিনি দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে কয়েকশ কলাম লিখেছেন।

জাতিসংঘে সবচেয়ে দীর্ঘ ভাষণ দেওয়ার রেকর্ডটি কাস্ত্রোর দখলে। ১৯৬০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ৪ ঘণ্টা ২৯ মিনিট ধরে ভাষণ দেন তিনি। কাস্ত্রোর সবচেয়ে দীর্ঘ ভাষণের রেকর্ড ৭ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। ১৯৯৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আরও পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ওই ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি।

 কিউবার সিগারেটকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তোলা কাস্ত্রো ১৯৮৫ সালে ধূমপান ছেড়ে দেন। তার কয়েক বছর পর ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বলতে গিয়ে কাস্ত্রো বলেছিলেন, “সিগারেটের বাক্স দিয়ে আপনি সবচেয়ে ভালো কাজ যেটা করতে পারেন সেটা হলো, বাক্সটি আপনার শত্রুকে দিয়ে দিন।”

২০১২ সালে টাইম ম্যাগাজিনের করা সর্বকালের সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় নাম ছিল ফিদেল কাস্ত্রোর।

পাঁচ জন নারীর গর্ভে কাস্ত্রোর সন্তান সংখ্যা নয় জন। তার বড় ছেলে ফিদেল কাস্ত্রো ডিয়াজ-বালার্ত, ‍যিনি দেখতে অনেকটাই পিতার মতো। ১৯৪৯ সালে ফিদেলের সাবেক স্ত্রী মির্তা ডিয়াজ-বালার্তের গর্ভে তার জন্ম হয় এবং তিনি একজন পরমাণু বিজ্ঞানী।

১৯৫০ সালে আত্মগোপনে থাকার সময় কাস্ত্রোর সঙ্গে হাভানার একজন সমাজকর্মীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে, যার ফসল তাদের কন্যা এলিনা ফার্নান্দেজ। যিনি পর্যটকের ছদ্মবেশে ১৯৯৩ সালে কিউবা ছাড়েন এবং বর্তমানে মিয়ামিতে বসবাস করছেন।

১৯৬০ সাল থেকে আইনত কাস্ত্রোর স্ত্রী দালিয়া সোতো দেল ভাল্লের ঘরে তার পাঁচ ছেলে রয়েছে।

এছাড়া ক্ষমতা নেওয়ার আগে আরও দুই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার পর এক পুত্র ও এ কন্যার জনক হন কাস্ত্রো।


তরুণ বয়েসে ফিদেল কাস্ত্রো। প্রথমদিকে তার লক্ষ্য ছিল আইনজীবী হবার, সেজন্য তিনি আইন পড়েছিলেন।


বিপ্লবের চেষ্টার অংশ হিসেবে ১৯৫৩ সালে এক সেনাছাউনিতে আক্রমলের অভিযোগে কাস্ত্রো গ্রেফতার হন।


কিউবার শাসক ফুলহেনসিও বাতিস্তাকে উৎখাত করে ক্ষমতায় আসেন কাস্ত্রো।


ফিদেল কাস্ত্রো আর দক্ষিণ আমেরিকার আরেক বিপ্লবী নেতা আর্নেস্তো চে গুয়েভারা।



তিন বছর বিপ্লবী তৎপরতার পর ১৯৫৯ সালের প্রথম দিনে ক্ষমতা দখল করেন কাস্ত্রো।


ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৫৯ সালে হাভানায় ঢোকার পর কাস্ত্রো ও অন্য বিপ্লবী নেতারা।



কাস্ত্রোর সাথে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ।



খেলাধুলার , বিশেষ করে বেসবলের ভক্ত ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো।



কাস্ত্রোকে অনেকে স্বৈরশাসক বললেও তার বিপুল জনসমর্থনও ছিল।



২০০৬ সালে ভাই রাউলের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেন ফিদেল কাস্ত্রো। এর পর অসুস্থ ফিদেলকে খুব কমই প্রকাশ্যে দেখা গেছে। ছবিতে ভেনেজুয়েলার উগো চাভেজ এবং রাউলের সাথে ফিদেল কাস্ত্রো।


 ছবি: বিবিসি, তথ্য: bdnews24
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url