নীল নদের পানি নিয়ে দেশে দেশে দ্বন্দ্ব
পানি নিয়ে দেশে দেশে দ্বন্দ্ব চলছে বিশ্বের অনেকখানেই। তেমনই একটি দ্বন্দ্ব চলছে বিখ্যাত নীল নদের পানি নিয়ে। এ দ্বন্দ্বে জড়িত নদটির অববাহিকার ১০টি দেশ।
দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া দেশগুলো হচ্ছে উগান্ডা, বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, কঙ্গো, তানজানিয়া, কেনিয়া, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, সুদান ও মিসর। নীল নদের পানি আফ্রিকার এ ১০টি দেশের প্রাণ। ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের বাস এ নদীর তীর ঘেঁষে। মূলত তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতেই সব কৃষি ও শিল্পক্ষেত্র। বাকি অঞ্চলজুড়ে বিশাল মরুভূমি।
ঔপনিবেশিক আমলের কয়েকটি চুক্তি অনুযায়ী মিসর ও সুদান এ নদের ৯০ শতাংশ পানি পায়। উগান্ডা, রুয়ান্ডা, তানজানিয়া ও ইথিওপিয়াসহ উজানের দেশগুলো একে অন্যায্য বলে একটি নতুন চুক্তির দাবি করে আসছে। কিন্তু গত ১৩ বছর ধরে আলোচনা করেও এ বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি।
এরই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি পূর্ব আফ্রিকার উল্লিখিত চার দেশ উগান্ডা, রুয়ান্ডা, তানজানিয়া ও ইথিওপিয়া নীল নদের পানির ভাগ নিয়ে একটি চুক্তি সই করায় নতুন করে উত্তাপের সঞ্চার হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।
মিসর ও সুদান ‘কো-অপারেটিভ ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন দ্য নীল রিভার বেসিন’ নামে ওই চুক্তির কঠোর বিরোধিতা করছে। তারা বলছে, এটি বৈধ নয়। কেনিয়া, বুরুন্ডি ও কঙ্গো এক বছরের মধ্যে ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞরাই হিসাব কষে ঠিক করবেন কার কতখানি পানি পাওয়া উচিত।
কয়েকটি দেশের এই খণ্ডিত উদ্যোগ পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব দেশের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।
চুক্তি উপলক্ষে সভার আগে সুদানি প্রতিনিধিদলের আইন উপদেষ্টা আহমেদ আল-মুফতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, নয়টি দেশের সবাই একটি ঐকমত্যের কাছাকাছি। তাই উজানের দেশগুলোর আলাদা চুক্তি স্বাক্ষরের কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি আরও বলেন, অপেক্ষাকৃত বেশি উর্বর অঞ্চলের দেশের চেয়ে মিসর ও সুদানের বেশি পানি প্রয়োজন।
সভার আগে কেনিয়ার পানিসম্পদ-বিষয়ক পরিচালক জন নিয়ারো বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা একটি সর্বসম্মত সহযোগিতামূলক চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে শান্তি আসবে না।’
নীল নদের পানির সুষ্ঠু বণ্টনের জন্য ১৯৯০-এর দশকজুড়ে নানা চেষ্টা চলে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে চালু হয় ‘নাইল বেসিন ইনিশিয়েটিভ’ (এনবিআই) নামের একটি উদ্যোগ। এতে ইরিত্রিয়া ছাড়া নীল নদ-তীরবর্তী নয়টি দেশই যোগ দেয়। কিন্তু এনবিআই তেমন কোনো সাফল্য পায়নি।
এদিকে সম্প্রতি ইথিওপিয়া তার দেশে নীল নদের ওপর বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। ইথিওপিয়া নীল নদের ৮৫ শতাংশ পানির উৎস হলেও ঔপনিবেশিক আমলের চুক্তির কারণে খুব সামান্যই ব্যবহার করতে পারে তারা।
প্রভাবশালী মিসর বলছে, ইথিওপিয়ার ওই বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করা চলবে না।
এই অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে আরব লীগ নীল-তীরবর্তী দেশগুলোকে মতপার্থক্য ভুলে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, আলোচনার মধ্য দিয়েই পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা।