গেঁটে বাত বা গাউট

গেঁটে বাত বা গাউট কি ? গেঁটে বাত বা গাউট এমন একটা রোগ, যা অসুস্থতা নির্ণয়ের পাশাপাশি বুঝিয়ে দেয় রোগীর আর্থিক সামর্থ্য কতটুকু। কারণ না খাওয়া, অভাবী বা অপুষ্টির শিকার কোনো মানুষেরই কখনও গেঁটে বাত রোগটি হয় না। গেঁটে বাত মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের বেশি হয়।

রোগের সৃষ্টি:-

রক্তে যখন ইউরিক এসিড বেড়ে যায়, তখন এই বেড়ে যাওয়া এসিড অল্প অল্প করে শরীরের বিভিন্ন খাঁজে বা পকেটগুলোয় জমা হতে থাকে এবং ক্রিস্টালের (Monosodium urate) আকার ধারণ করে। ধীরে ধীরে জমতে জমতে একদিন হঠাৎ করে দেখা যায় জয়েন্ট ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং ব্যথা হতে থাকে। ইউরিক এসিড ক্রিস্টালগুলো দেখতে সূচের মতো, তাই যন্ত্রণা হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার।

চিকিৎসা-
প্রাথমিকভাবে বাত সৃষ্টিকারী কারণ দমন করাই মূল লক্ষ্য হতে পারে। এজন্য খাদ্য গ্রহণসহ দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ব্যথা নিরাময় ও রোগ দমনের জন্য ওষুধ সেবন করা অপরিহার্য।

হঠাৎ আক্রান্ত বাত (Acute Attack)
এক্ষেত্রে দ্রুত কার্যক্ষম ননস্টেরয়েডাল এন্টিইনফ্লামেটরি ড্রাগ বা NSAID যেমন : ন্যাপ্রোঙ্নে, ডাইক্লোফেনাক, ইনডোমেথাসিন জোরালো ভূমিকা রাখে ব্যথা নিরাময়ে।

অপরদিকে ওরাল কলচিসিন ও (Oral colchicines) জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বমি ও ডায়রিয়া প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দেয়।

তীব্র ব্যথার সময় আক্রান্ত জয়েন্ট থেকে সিরিঞ্জের সাহায্যে তরল পদার্থ বের করে আনলে রোগী বেশ সুস্থতা বোধ করেন। পাশাপাশি জয়েন্টের অবস্থা বেশি তীব্র আকার ধারণ করলে তরল পদার্থ বের করার পাশাপাশি ওই জয়েন্টে ইনজেকশনের সাহায্যে স্টেরয়েডও প্রবেশ করানো হয়।

দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা (Chronic Treatment)
এক্ষেত্রে রোগীকে পরামর্শ দেয়াটাই প্রধান। প্রধানত রোগীকে শরীর থেকে মেদ ঝরানোর পাশাপাশি অ্যালকোহল বা সেরকম পদার্থ গ্রহণে সতর্কতার কথা শিখিয়ে দেয়া হয়। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় ইউরিক এসিডের মাত্রা কম রাখার জন্য মূলত ড্রাগ ব্যবহূত হয়। এক্ষেত্রে শর্তগুলো হলো

বার বার গেঁটে বাতে আক্রান্ত হওয়ায় টফিতে (Tophi) হাড় ক্ষয় বা অস্থি সন্ধিতে (joint) প্রখর সমস্যায় গেঁটে বাতের সঙ্গে কিডনি সমস্যায় বাত এবং তার সঙ্গে রক্তে ইউরিক এসিডের উচ্চমাত্রা হতে পারে।

অ্যালোপুরিনল (Allopurinol)
প্রারম্ভিক মাত্রা হলো ১০০-৩০০ মিলিগ্রাম প্রতিদিন। কিডনি রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে মাত্রা কম হবে। ধীরে ধীরে এ মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। অথবা মাত্রা কমানোর পাশাপাশি ওরাল কলচিসিন (colchicin) ০.৫ মিলিগ্রাম করে ১২ ঘণ্টা পর পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ চালিয়ে যেতে হবে।

প্রোবিনেসিড (Probenecid)

০.৫ মিলিগ্রাম ১ গ্রাম প্রতি ১২ ঘণ্টা পর পর অথবা সালফিন পাইরাজোন (Sulfinpyrayone) ১০০ মিলিগ্রাম প্রতি ৮ ঘণ্টা পর পর দেয়া যেতে পারে। এসব ড্রাগের সঙ্গে স্যালিসাইলেট জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ নিষেধ।

লিখেছেন:
ডা. শাহজাদা সেলিম
ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
সুত্র- alokitobangladesh(০১.০৪.১৪)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url