বাংলাদেশের সাড়া জাগানো সিনেমার তালিকা

নির্মাণ আঙ্গিক ও আলোচনার দিক দিয়ে ঢাকার অনেক ছবি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য অবস্থান করে নিয়েছে। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে কয়েকটি হলো- ১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়া চাষী নজরুলের 'ওরা এগারজন', আলমগীর কবিরের ধীরে বহে মেঘনা, জহিরুল হকের রংবাজ, সুভাষ দত্তের বলাকা মন, ঋতি্বক ঘটকের 'তিতাস একটি নদীর নাম' বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশেষ মানে উন্নীত করে। এই সুস্থ ও সৃজনশীল ধারায় ১৯৭৪ সালে নির্মিত হয় নারায়ণ ঘোষ মিতার 'আলোর মিছিল'। ১৯৭৫ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার 'লাঠিয়াল', খান আতার 'সুজন সখী' এই ধারারই প্রবাহ।

১৯৭৬ সালে ছয়টি চলচ্চিত্র বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ধারণাকেই পাল্টে দেয়। এগুলো হলো : রাজেন তরফদারের 'পালঙ্ক', হারুনর রশীদের 'মেঘের অনেক রঙ', আলমগীর কবিরের 'সূর্য কন্যা', কবীর আনোয়ারের 'সুপ্রভাত', আবদুস সামাদের 'সূর্যগ্রহণ' এবং আমজাদ হোসেনের 'নয়নমণি'। 

১৯৭৭ সালে আলমগীর কবিরের 'সীমানা পেরিয়ে', সুভাষ দত্তের 'বসুন্ধরা' পরিচ্ছন্নতা ও সুস্থতার দাবিদার। ১৯৭৮ সালে আমজাদ হোসেনের 'গোলাপী এখন ট্রেনে' এবং আবদুল্লাহ আল মামুনের 'সারেং বৌ' শিল্পসফল চলচ্চিত্র হিসেবে নন্দিত। স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয় ১৯৭৯ সালে। মসিউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলীর যৌথ নির্মাণ 'সূর্য দীঘল বাড়ি'। এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচয় করিয়ে দেয়।
আলমগীর কবিরের 'রূপালী সৈকতে'ও এই সময়ের উৎকৃষ্ট চলচ্চিত্র। সত্তর দশক ও আশির শুরুর সময়ে নির্মিত চলচ্চিত্র জহিরুল হকের রংবাজ (১৯৭৬), প্রাণসজনী (১৯৮২), রুহুল আমিনের বেইমান (১৯৭৪), অশোক ঘোষের নাচের পুতুল (১৯৭১), বেবী ইসলামের চরিত্রহীন (১৯৭৫), নজরুল ইসলামের স্বরলিপি (১৯৭১), আবদুল লতিফ বাচ্চুুর যাদুর বাঁশি (১৯৭৭), আবদুল্লাহ আল মামুনের সখী তুমি কার (১৯৮০), এখনই সময় (১৯৮০), আজিজুর রহমানের 'ছুটির ঘণ্টা' (১৯৮০) দর্শকপ্রিয়তা লাভ করতে সমর্থ হয়। 

আশির দশকের শেষার্ধে সুভাষ দত্তের ফুলশয্যা (১৯৮৬), আলমগীর কবিরের পরিণীতা (১৯৮৬), চাষী নজরুল ইসলামের শুভদা, বুলবুল আহমেদের রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত (১৯৮৭), নব্বই দশকের প্রথমার্ধে সৈয়দ সালাহ্উদ্দিন জাকীর আয়না বিবির পালা (১৯৯১), এহতেশামের চাঁদনী (১৯৯১) প্রভৃতি চলচ্চিত্র আলোচিত হয়েছে। 

দুই হাজার সালের শুরুতে চাষী নজরুল ইসলামের হাসন রাজা, তানভীর মোকাম্মেলের লালন (২০০৪), মোরশেদুল ইসলামের দুখাই, লালসালু, আখতারুজ্জামানের পোকামাকড়ের ঘরবসতি, তারেক মাসুদের মাটির ময়না (২০০২), কাজী মোরশেদের ঘানি (২০০৮) এর মতো উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সামাজিক বিষয়কে উপজীব্য করে নির্মিত এই চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ-কুশলতায় বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে।

 ২০০৩ সালে তারেক মাসুদ পরিচালিত 'মাটির ময়না' ছবিটি সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কারে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য পেশ করা হয়। চূড়ান্ত পুরস্কারের জন্য মনোনীত না হলেও এটি বেশ গুরুত্ববহ ছিল। কারণ এটিই প্রথম বাংলাদেশি ছবি যা অস্কারে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রেরণ করা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url