জেনে নিন ডেঙ্গু না চিকুনগুনিয়া


লেখক পরিচিতি : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। 

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ডেঙ্গুর জ্বরের পাশাপাশি আরেকটি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।যার নাম হয়তো আপনি এখনো জানেন না। নামটি হলো চিকুনগুনিয়া। 

ইদানীং অনেক রোগী প্রায়ই অভিযোগ করছেন, তাদের ভাইরাস জ্বর বা ডেঙ্গু হয়েছিল, কিন্তু জ্বর সেরে গেলেও শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। সাধারণত যে কোনো ভাইরাস বা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ৭ থেকে ১০/১২ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। অথচ দেখা যাচ্ছে জ্বর সেরে গেলেও রোগী আরও দীর্ঘদিন অসুস্থ ও দুর্বলবোধ করছেন, বিশেষ করে শরীরের বিভিন্ন গিটে ব্যথা কিছুতেই যাচ্ছে না বা দুর্বলতা, ক্লান্তি কাটছে না। আসলে ডেঙ্গু হিসেবে সন্দেহ করা হলেও এ রোগটি সম্ভবত ডেঙ্গু নয়, বরং অন্য একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যাকে বলে চিকুনগুনিয়া। 


চিকুনগুনিয়ার মূল উপসর্গ :  চিকুনগুনিয়ার মূল উপসর্গ হলো জ্বর এবং অস্থিসন্ধির ব্যথা। জ্বর অনেকটা ডেঙ্গু জ্বরের মতোই। দেহের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে প্রায়ই ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যায়, তবে কাঁপুনি বা ঘাম দেয় না। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে মাথা ব্যথা, চোখ জ্বালা করা, গায়ে লাল লাল দানার মতো র‌্যাশ, অবসাদ, অনিদ্রা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। 

এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়, এমনকি ফুলেও যেতে পারে। জ্বর সাধারণত ২ থেকে ৫ দিন থাকে এবং এরপর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে তীব্র অবসাদ, পেশিতে ব্যথা, অস্থিসন্ধির ব্যথা ইত্যাদি জ্বর চলে যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনকি মাসের পর মাসও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা বা প্রদাহ থাকতে পারে, যা অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে স্বাভাবিক কাজ করতে অক্ষম করে তোলে। রোগী ব্যথায় এতই কাতর হয় যে হাঁটতে কষ্ট হয়, সামনে বেঁকে হাঁটে। স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও তাই একে ‘ল্যাংড়া জ্বর’ বলা হয়। 

বয়স্ক রোগীদের রোগের তীব্রতা অনেক বেশি হয় এবং উপসর্গগুলো বিশেষ করে শরীর ব্যথাও বেশিদিন থাকে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সাধারণত এত দীর্ঘ সময় ধরে শরীর ব্যথা বা অন্য লক্ষণগুলো থাকে না। যদিও জ্বর ভালো হয়ে গেলে কয়েকদিন দুর্বলতা বা ক্লান্তি লাগতে পারে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মূল সমস্যা হলো শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ, যা অনেক সময় খুব ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু চিকুনগুনিয়া জ্বরে ডেঙ্গুর মতো রক্তক্ষরণ হয় না এবং রক্তের প্লাটিলেট সাধারণত খুব বেশি কমে না। এই রোগে আক্রান্ত হলে কেউ মারা যায় না, শুধু দীর্ঘদিনের জন্য অনেকেই স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। ডেঙ্গুতে চারবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু চিকুনগুনিয়া একবার হলে সাধারণত আর হয় না।

চিকুনগুনিয়া রোগটি ভাইরাসজনিত। শব্দটি আফ্রিকান, যার অর্থ ‘ধনুকের মতো’ বেঁকে যাওয়া। এ রোগটির প্রাদুর্ভাব আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে বেশি হলেও আমাদের দেশের কিছু কিছু এলাকায়ও দেখা যাচ্ছে। আমাদের অতি পরিচিত ডেঙ্গুর সঙ্গে এর অনেকটাই মিল রয়েছে। ডেঙ্গুর মতোই এ ভাইরাসটি এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবপ্টিকাস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে। চিকুনগুনিয়া মানবদেহ থেকে মশা এবং মশা থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে থাকে। মানুষ ছাড়াও বানর, পাখি, তীক্ষ দন্ত প্রাণী যেমন ইঁদুরে এ ভাইরাসের জীবনচক্র বিদ্যমান।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url