সন্তান না হওয়ার ১০টি কারন এবং উপায় জেনে নিন

১. অতিরিক্ত ওজন –
অতিরিক্ত ওজন সন্তান না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। এটি শরীরের হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে এবং নারীর সন্তান ধারণ ক্ষমতাকে অত্যন্ত জটিল করে তোলে। এর ফলে নারীর জরায়ুর কার্যক্ষমতাও হ্রাস পায়। ২০০৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, ১৮ বছর বয়সের যেসব নারী ওজনাধিক্যের সমস্যায় রয়েছেন, তাঁরা জরায়ুর বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হন এবং তাঁদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা কমে যায়।

২. রুগ্ন শরীর –
অতিরিক্ত ওজন যেমন সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস করে; তেমনি খুব বেশি পাতলা হওয়াও ক্ষতিকর। বেশি চিকন হলে নারীর দেহে ল্যাপটিন হরমোনের অভাব হয়। এই হরমোন ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরে এই হরমোনের ঘাটতি হলে ঋতুচক্রের সমস্যা হয়। তাই গবেষকদের মতে, উচ্চতা এবং ওজনের সামঞ্জস্য বজায় রাখুন। সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন ঠিক রাখুন। এটি নারীর বন্ধ্যত্ব দূর করতে সাহায্য করে।

৩. বয়স বেশি হওয়া –
যখন নারীর ঋতুচক্র স্বাভাবিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়; তখন সে আর সন্তান ধারণ Child capacity করতে পারে না । ঋতুচক্র একবারে বন্ধ হয়ে যাওয়াকে মেনোপজ বলে। তবে যদি মেনোপজের ঠিক আগের পর্যায়ে শরীরে ইসট্রোজেন বা প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায় বা একদমই নিঃসৃত না হয়, তখন তাকে পেরিমেনোপজ বলা হয়। মেনোপজ হয় সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। ৪৫ বছরের আগেই পেরিমেনোপজ হতে পারে। তাই অধিকাংশ চিকিৎসকের মতে; ৩৫ বছরের আগে সন্তান নেওয়া উচিত তা না হলে পরে সন্তান ধারণক্ষমতা কঠিন হয়ে পড়ে।

৪. বংশগত কারণ –
যদি আপনার মায়ের মেনোপজ আগে হয়, তবে আপনারও আগে থেকেই মেনোপোজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নারীরা জন্মায় কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে এবং এই জিনিসটি বেশি হওয়া বা কম হওয়ার পেছনে জিনগত কারণও কাজ করে। এ রকম অনেক কিছুই নির্ভর করে বংশগত কারণে। গবেষকদের মতে, যদি পরিবারে দেরিতে সন্তান ধারণের ইতিহাস থাকে; তবে আপনারও দেরিতে সন্তান হতে পারে।

৬. মানসিক চাপ –
গবেষণায় বলা হয়, যেসব নারী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকেন, তাঁদের সন্তান ধারণ ক্ষমতা Child capacity অনেক কমে যায়। কারণ, চাপ শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটায়। তবে চাপই এর একমাত্র কারণ নয়। গবেষকদের পরামর্শ; যেসব নারী সন্তান নিতে চাইছেন, তাঁদের চাপ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি শেখা খুব জরুরি।

৫. মদ্যপান –
মদ্যপানে অভ্যস্ত নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান না হওয়ার ঝুঁকি থাকে অনেক। ২০০৪ সালে সুইডিশ বিজ্ঞানীরা ১৮ বছর ধরে মদ্যপান করেন—এমন সাত হাজার নারীর ওপর গবেষণা করে দেখেন; তাঁদের সন্তান ধারণক্ষমতা অনেক কমে গেছে। তাই গবেষকদের পরামর্শ; যদি আপনি সন্তান নিতে চান, তবে অবশ্যই মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।

৬. বেশি ব্যায়াম –
ব্যায়াম করা আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং শক্তি দেয়। যখন আপনি সন্তান নিতে চাইবেন, এটি খুব জরুরি। তবে আপনি যদি অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন, এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যাঁরা দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি ব্যায়াম করেন, তাঁদের এ আশঙ্কা থাকে।

৭. থাইরয়েড সমস্যা –
থাইরয়েড সমস্যা গর্ভধারণকে ব্যাহত করে। থাইরয়েড হলো এমন একটি গ্রন্থি; যা ঘাড়ের সামনের দিকে নিচের অংশে থাকে। এই থাইরয়েড থেকে অনেক হরমোন নিঃসৃত হয়। থাইরয়েডজনিত কোনো সমস্যা হলেও সন্তান ধারণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

৮. ক্যাফেইন –
আপনি যদি প্রচুর পরিমাণ ক্যাফেইন জাতীয় জিনিস খান; এটি আপনার গর্ভধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। গবেষণায় বলা হয়; যাঁরা দিনে পাঁচ কাপের বেশি কফি পান করেন; তাঁদের এ সমস্যা হয়। তাই সন্তান নিতে চাইলে কফিপান কমিয়ে দেওয়ার পক্ষেই মতামত গবেষকদের।

৯. যৌন সমস্যা –
যৌন বাহিত রোগের কারণেও সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। যেমন : সিফিলিস, গনোরিয়া, প্রদাহ ইত্যাদি।

১০. স্বাস্থ্যগত সমস্যা –
বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার ফলে বন্ধ্যত্ব হতে পারে। পলিসাইটিক ওভারি সিনড্রোম; সিস্ট; এনডোমিটট্রিওসিস—এসব বিষয় অনেক সময় নারীর বন্ধ্যত্বের জন্য দায়ী। এছাড়া রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস অনেক সময় সন্তান না হওয়ার কারণ হয়। তাই এসব সমস্যা হলে আগে থেকে চিকিৎসা করাতে হবে; তা না হলে সন্তান ধারণ করতে সমস্যা হতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url