রক্তদান করলে কি হয়
রক্তদান করলে কি কোন ক্ষতি হয়?
জীবন
বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন। এ বাক্যটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। আমাদের মধ্যে
অনেকেই রয়েছেন যারা অন্যের জীবন বাঁচাতে প্রতিনিয়ত স্বেচ্ছায় রক্তদান করে
থাকেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সম্মান জানাতেই ১৪ জুনকে বিশ্ব
রক্তদাতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।
আমাদের দেশে রক্তদাতার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
দেশের বিভিন্ন দুর্যোগসহ হাসপাতালগুলোতে রোগীর প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় রক্তদান
করে এদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে তারা অসহায়ের পাশে আছে। আবার অনেকেরই
রক্তদানের ইচ্ছা থাকলেও একটা অজানা শঙ্কার কারণে তারা রক্তদান থেকে বিরত
থাকেন। আসলে রক্তদান কোনো দুঃসাহসিক কাজ নয়, সুস্থ-সবল মানুষ যাদের বয়স ১৮
বছরের বেশি ও যাদের শারীরিক ওজন ৪৫ কেজির ওপরে তারা প্রতি চার মাস অন্তর এক
ব্যাগ রক্ত অনায়াসেই দান করতে পারেন।
মানবদেহে সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় লিটার
রক্ত থাকে। দান করা এক ব্যাগে থাকে ৩৫০ থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত। দান করা
রক্তের প্লাজমা বা রক্তরসের অভাব পূরণ হয়ে যায় বেশি পানি পানের মাধ্যমে।
অন্যদিকে রক্তের প্রধান উপাদান লোহিত কণিকা ১২০ দিন পর পর মানুষের শরীরে
স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রতিস্থাপিত হয়। অর্থাৎ কেউ রক্ত দিক বা না দিক, পুরনো
লোহিত কণিকাগুলো মরে গিয়ে ১২০ দিন পর পর মানুষের শরীরে নতুন লোহিত কণিকা
জন্ম নেয়।
রক্তদানের জন্য প্রয়োজন শুধু একটু সাহস ও সদিচ্ছা। রক্তদান করলে
রক্তদাতার শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না ও রক্তদানের জন্য আলাদা কোনো খাবার
খাওয়ারও প্রয়োজন হয় না। তবে রক্তদানের পর পানি জাতীয় খাবার খাওয়া ভালো। মনে
রাখবেন, আপনার আমার এক ব্যাগ রক্ত বাঁচাতে পারে একটি মুমূর্ষু রোগীর জীবন।
তাই জীবন বাঁচাতে আসুন আমরা রক্তদানে উদ্বুদ্ধ হই ও অন্যকেও উৎসাহিত করি।
আমাদের দেশে মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন সন্ধানী বাংলাদেশে প্রথম
ব্যাপকভাবে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির কাজ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁধন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এবং আরও অনেক সংস্থা, যারা
স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রোগীকে প্রয়োজনীয় নিরাপদ রক্ত সরবরাহ করে আসছে। ইদানীং
ইন্টারনেট ও ফেসবুকের মাধ্যমেও রক্তদাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে রক্তদানের
ক্ষেত্রে রক্তদাতার এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি ও প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষাসহ
ক্রসম্যাচিং করা বাধ্যতামূলক।
এবার আসুন জেনে নিই রক্তদান সম্পর্কিত কিছু তথ্য-
*সুস্থ-সবল মানুষ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তারা রক্তদান করতে পারেন।
*যাদের ওজন ৪৫ কেজির বেশি তারা অনায়াসেই রক্তদান করতে পারেন।
*যিনি চার মাসের মধ্যে রক্তদান করেননি, তিনি রক্তদান করতে পারেন।
*২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো সময় রক্তদান করা যায়।
*ভরাপেটে খাওয়ার ৩০ থেকে ৬০ মিনিট পর রক্ত দেয়া ভালো।
* খালি পেটে রক্তদান না করে হালকা খাবার খেয়ে রক্ত দেয়া ভালো।
বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকরা মনে করেন, রক্তদান করা শরীরের জন্য ভালো। তাদের মতে, রক্ত দেয়ার
সঙ্গে সঙ্গে হাড়ে অবস্থিত বোনমেরো বা অস্থিমজ্জা নতুন করে রক্ত তৈরি করতে
উদ্দীপ্ত হয় ও দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকায় শরীর তাজা হয়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বছরে তিনবার রক্তদান করেছেন তাদের শরীরের লোহিত
রক্তকণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা অনেক বেড়ে যায় ও নিয়মিত রক্তদান করলে হার্ট
অ্যাটাকসহ হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়াও রক্তদানের মাধ্যমে রক্তদাতা
বিনামূল্যে জানতে পারেন তার শরীরে কোনো রোগ আছে কিনা। মোট কথা, রক্তদানে
কোনো ক্ষতি নেই বরং যিনি রক্তদান করেন তিনি শারীরিক ও মানসিক তৃপ্তি নিয়ে
আনন্দে বেঁচে থাকেন। তাই আসুন নিজে রক্ত দিই ও অন্যকে রক্ত দিতে উৎসাহিত
করি।
লিখেছেন-
ডা. মহসীন কবির
জনস্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক ও গবেষক
প্রভাষক, ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন
mohsinkabir13@gmail.com সুত্র