তারুণ্য ধরে রাখার ৫টি উপায়

বয়সের সঙ্গে মানুষের দেহ-মনে বার্ধক্য চলে আসে। যৌবনদীপ্ত সেই উচ্ছলতা ধীরে ধীরে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে-এটাই নিয়ম। বয়সকে থামানোর কোনো উপায় না থাকলেও তারুণ্য ধরে রাখার উপায় নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালাচ্ছেন নিরন্তর। বয়সের সঙ্গে গুটিকয়েক বিষয়ে অভ্যাসগত পরিবর্তন গড়ে তুললে অতীত হয়ে যাওয়া তারুণ্যকে নতুন করে অনুভব করা যাবে। 

5 Ways to youth retention.

তিনটি জিনিস পরিত্যাজ্য: বয়স বাড়লেও যৌবনদীপ্তি কমবে না যদি তিনটি জিনিস এড়িয়ে চলতে পারেন- ধূমপান, স্ট্রেস ও সূর্য। ধূমপানে ত্বকের কোলাজেন নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে এর সজীবতা উধাও হয়ে যায়। স্ট্রেস নানা সমস্যার জন্ম দেয়, যার মধ্যে একটি ওজন বাড়িয়ে দেয়া। বাড়তি ওজন বয়সের ছাপ আরো স্পষ্ট করে দেয়। আর সূর্য থেকে গা বাঁচিয়ে চলুন। এর অতিবেগুনি রশ্মিতে ত্বকের সৌষ্ঠব হারিয়ে যায় এবং বয়সের ছাপ পড়ে।

মস্তিষ্কের খাবার: মনে রাখবেন, আপনার দেহ-মনের খোরাক আসে প্রতিদিনের খাবার থেকে। তাই মানসিক অবস্থা, চিন্তাভাবনা ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত খাবারের প্রভাব থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমধ্যসাগর এলাকার মানুষের খাদ্য তালিকা স্মৃতিভ্রংশ হওয়া থেকে বাঁচায়। কার্ডিওলজিস্ট ডা. অসীম মালহোত্রা বলেন, ভূ-মধ্যসাগরীয় লোকজনের খাদ্য তালিকার এই বিশেষত্ব পশ্চিমা বিশ্বের বিজ্ঞানীদেরও অবাক করেছে। তাই তারুণ্য ধরে রাখতে শৈশব থেকেই আদর্শ খাদ্য তালিকা বেছে নেয়ার পরামর্শ দেন তারা।

মস্তিষ্কের ব্যায়াম: দেহের মতো মস্তিষ্কেরও ব্যায়ামের প্রয়োজন রয়েছে। এই ব্যায়াম মস্তিষ্ককে দ্রুত জ্ঞান বা শিক্ষাগ্রহণে পারদর্শী করে তোলে, যেমনটি যৌবনে সম্ভব। মস্তিষ্কের নানা ধরনের ব্যায়াম করুন। এতে যৌবনদীপ্ত সজীব চিন্তা-চেতনার জন্ম দেবে আপনার মস্তিষ্ক।

নতুন কিছু করা: যৌবন যেমন নতুন কিছু করার আদর্শ সময়, তেমনি পরিণত বয়সে নতুন কিছু করার উদ্যোগে যৌবনের উদ্যম মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যা কখনো করেননি এবং করতে মন চায়নি, সেই তালিকা থেকে নতুন কিছু শুরু করুন। নতুন অভিজ্ঞতাও হবে, নতুনত্বের আনন্দ উপভোগ্য হবে ঠিক যেমনটি আগে হতো।

ত্বকের যত্ন: বয়সের বাহ্যিক রূপটি ধরা দেয় ত্বকে। তাই ত্বকের যতেœ সচেতন হতে হবে। এ কাজের মৌলিক বিষয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং ময়েশ্চার ধরে রাখা। এ জন্য কিছু কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান বা প্রসাধন ব্যবহার করতে পারেন। রাতে শোয়ার আগে সিরাম (ংবৎঁস) ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন ডার্মাটোলজিস্ট এলিজাবেথ টানজি। তার মতে, এটি খুব শক্তিশালী অ্যান্টি-এজিং উপাদান। ত্বকের ওমেগা-৩-এর চাহিদা মেটাতে কো-এনজাইম কিউ-১০ ব্যবহার করতে পারেন।

বৈচিত্র্যময় বন্ধু মহল: সমাজের নানা পেশার নানা বয়সের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে বিভিন্ন বয়সের মানুষের মন-মানসিকতার সঙ্গে আপনিও মানানসই হয়ে উঠবেন। ভিন্ন ঘরানার মানুষের সঙ্গে বৈচিত্র্যময় সময় কাটানোতে আপনার মনও থাকবে প্রাণবন্ত। মনেই হবে না যে বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন।

স্বেচ্ছাশ্রম: দারুণ উদ্যম বোধ করবেন যদি কোনো কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। তা ছাড়া স্বেচ্ছাশ্রম আপনার এবং আপনার পরিবার ও সমাজের জন্যও সম্মান বয়ে আনতে পারে। কাজে-কর্মে উদ্দীপনা ফিরে আসবে। নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাইয়ের আইকান স্কুল অব মেডিসিনের এক গবেষক হান্না শোচেরিয়ার জানান, স্বেচ্ছাশ্রম দেহ-মন-প্রাণকে সবুজ করে দেয়। এতে সহানুভূতি, পরোপকারিতার মনোভাব গড়ে ওঠে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে হৃদযন্ত্রকে রাখে সবল।

চাপ থেকে মুক্তি: প্রথম পয়েন্টে তিনটি বিষয় পরিত্যাগ করার একটি ছিল চাপ বা স্ট্রেস। কিন্তু এটা থেকে মন চাইলেই তো আর মুক্তি পাওয়া যায় না। তাই কিছু বাড়তি কাজ তালিকায় যোগ করতে হবে। ভালো কিছুতে মন দেয়া, প্রিয়জনদের কথা ভাবা বা নানা শৌখিন অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনি চাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

চর্চা চালিয়ে যান: সব শেষের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি হলো, আগেরগুলোর চর্চা চালিয়ে যাওয়া। যে পরামর্শগুলো দেয়া হয়েছে, এর সঙ্গে যুক্ত হতে সময় ব্যয় করুন। প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা সময় খরচ করুন এ কাজে। এভাবে চর্চা চালিয়ে গেলে আপনি তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। আর একবার অভ্যস্ত হতে পারলে মনেই হবে না যে যৌবন পেরিয়ে গেছে।
লিখেছেন শফি উদ্দীন। সুত্র
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url