ক্যাডেট কলেজে ভর্তিচ্ছুরা জেনে নিন পরীক্ষা পদ্ধতি সহ সকল নিয়ম
ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ ও নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিতর্ক, সংস্কৃতির চর্চা, খেলাধুলাসহ সব ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে তাদের সার্বিকভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। তাই ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক শিক্ষাই অর্জন করে না, তারা নেতৃত্বের গুণে বিকশিত হয়ে উঠে। এর ফলে পড়াশোনা শেষে কর্মজীবনে তারা যথাযথভাবে নেতৃত্ব প্রদান করতে সক্ষম হয়।
শিক্ষার্থী ভর্তির লক্ষ্যে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া ১০ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে। তা চলবে ১০ ডিসেম্বর-২০১৬ বিকাল ২টা পর্যন্ত। আর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৬ জানুয়ারি-২০১৭। লিখিত পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ সময় আড়াই ঘণ্টা।
১২টি ক্যাডেট কলেজের মধ্যে তিনটি শুধু মেয়েদের জন্য ও বাকি ৯টি শুধু ছেলেদের জন্য। তিনটি গার্লস ক্যাডেট কলেজ হলো ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ ও জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ।
পরীক্ষা পদ্ধতি: ক্যাডেট কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের চারটি ধাপের মাধ্যমে বাছাই করা হয়। এই চারটি ধাপ হলো লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্যুটাবিলিটি টেস্ট। পরীক্ষার সর্বমোট নম্বর ২৭৫। উল্লিখিত চারটি ধাপে উত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষেই চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
যোগ্যতা : আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। এছাড়া আরও যেসব যোগ্যতা লাগবে সেগুলো হলো প্রার্থীদের ৬ষ্ঠ শ্রেণি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে, ১ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে বয়স সর্বোচ্চ ১৩ বছর ৬ মাস হতে হবে এবং ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই উচ্চতা ন্যূনতম ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি হতে হবে। সেইসঙ্গে যেসব কারণে কোনো শিক্ষার্থী অযোগ্য বিবেচিত হবে সেগুলো হলো পূর্বে ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ; লিখিত, মৌখিক ও স্যুটাবিলিটি টেস্টে অযোগ্য; গ্রস নক নী, ফ্ল্যাট ফুট, কালার ব্লাইন্ড ও অতিরিক্ত ওজন। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ যেমন অ্যাজমা, মৃগী, হূদরোগ, বাত, বাতজ্বর, যক্ষ্মা, পুরাতন আমাশয়, হেপাটাইটিস, ডিওডেনাল আলসার, রাতকানা, যেকোনো প্রকার ডায়াবেটিস, হেমোফাইলিয়া ও বিছানায় প্রস্রাব করা রোগে আক্রান্ত শিক্ষার্থী অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
আবেদন করতে হবে যেভাবে: আগ্রহী শিক্ষার্থীরা শুধু www.cadetcollege.army.mil.bd এ সাইটের মাধ্যমেই আবেদন করতে পারবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সুবিধার্থে অনলাইনে আবেদনফরম পূরণের জন্য প্রতিটি ক্যাডেট কলেজ ও ঢাকা আর্মি স্টেডিয়ামে একটি করে ‘E-booth Outlet’ স্থাপন করা হয়েছে। যেকোনো ‘E-booth Outlet’এর মাধ্যমে যেকোনো পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য আবেদন করা যাবে। সেইসঙ্গে প্রতিটি ‘ই-বুথে’ আবেদন ফি জমা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আবেদন ফি বাবদ ১,৪০০ টাকা ট্রাস্ট ব্যাংক মোবাইল মানি, কিউ ক্যাশ এবং টেলিটকের মধ্য থেকে যেকোনো একটি উপায়ে প্রেরণ করা যাবে। প্রতিটি ‘ই-বুথ আউটলেট’ শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া উক্ত তারিখের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চালু থাকবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র : অনলাইনে সফলভাবে আবেদনের পর শিক্ষার্থীদের তাদের প্রবেশপত্রে উল্লিখিত স্ব-স্ব পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাডেট কলেজের ঠিকানা বরাবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেজিস্ট্রার্ড ডাক/বাহকের মাধ্যমে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রেরণ করতে হবে। ১৫ ইঞ্চি বাই ১০ ইঞ্চি খামের উপর প্রার্থী তার ইনডেক্স নম্বর ও পরীক্ষা কেন্দ্রের নাম উল্লেখপূর্বক যেসব কাগজপত্র সংযুক্ত করবে সেগুলো হলো প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী বা প্রাথমিক ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সত্যায়িত সনদপত্র, ইংরেজি মাধ্যমে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পঞ্চম বা সমমান শ্রেণিতে উত্তীর্ণের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র, প্রার্থীর জন্ম নিবন্ধন বা জন্ম সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, যেকোনো মাধ্যমে ষষ্ঠ বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সাল উল্লেখপূর্বক প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সনদপত্র, প্রার্থীর পিতা বা অভিভাবক ও মায়ের মাসিক আয়ের স্বপক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র, প্রার্থীর পিতা বা অভিভাবক ও মা উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টিআইএন সনদের যদি থাকে সত্যায়িত ফটোকপি এবং অনলাইন আবেদনপত্রে আপলোড করা ছবির অনুরূপ ১টি পাসপোর্ট ও ১টি স্ট্যাম্প সাইজ রঙিন ছবি। আর বিভিন্ন কোটাভুক্ত প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রও সংযুক্ত করতে হবে।
প্রস্তুতি : ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা অন্য সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা থেকে ভিন্ন। এছাড়া আসন সংখ্যার তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা থাকে কয়েকশ’ গুণ। তাই এ পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে দরকার দীর্ঘ অধ্যবসায় ও যথাযথ গাইডলাইন মেনে পড়াশোনা। প্রস্তুতি যথাযথ না হলে ক্যাডেটের মতো ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়া সত্যিই কঠিন। এক্ষেত্রে পরীক্ষা সামনে রেখে বিশেষ প্রস্তুতি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ বড় ভূমিকা রাখে। শিক্ষার্থীদের ক্যাডেট ভর্তি প্রস্তুতিতে সহায়তা প্রদানকারী দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে সাফল্যের শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠান ঢাকার উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের ‘শহীদ ক্যাডেট একাডেমী’। প্রতিষ্ঠানটিতে ক্যাডেট ভর্তির প্রস্তুতি প্রোগ্রাম চলছে। আরও জানতে ফোন ০১৯১৩৩৬৬৭৫৫। সেইসঙ্গে পরীক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে, পরীক্ষায় চূড়ান্ত সাফল্য পেতে হলে এখন থেকেই বাকি দিনগুলো সঠিক নির্দেশনা মেনে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। নিজেদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
পরীক্ষার মাধ্যম : বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের যেকোনো একটি মাধ্যম বেছে নিতে হবে। মোট ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ইংরেজিতে রয়েছে ৬৫ নম্বর, বাংলায় ৪০, গণিতে ৫৫ এবং সাধারণ জ্ঞানে ৪০ নম্বর। বিষয়ভিত্তিক ভালো করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেশ কয়েকটি বই পড়তে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষকের সহায়তা নেওয়া ভালো।